কালকিনি অফিস:
পতিতাবৃত্তি বন্ধ না করা হলে হরতাল ধর্মঘট ও অনশণ কর্মসূচি ঘোষণা দিলেন মাদারীপুর জেলা ইসলাহে কওম পরিষদ। যৌনপল্লীসহ সকল প্রকার সামাজিক অবক্ষয় প্রতিরোধের দাবীতে বিশাল গণসমাবেশ’ এই পোস্টারিং, মাইকিং ও জেলার প্রতিটি ইউনিয়ন-গ্রাম পর্যায়ে কমিটি গঠন করে মাদারীপুরে গণসমাবেশের ডাক দেয় মাদারপুর জেলা ইসলাহে কওম পরিষদ নামে একটি সংগঠন। গতকাল রবিবার বেলা ২টায় জেলা সদর জামে মসজিদ ময়দানে এই গণসমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। আয়োজক কমিটি যৌনকর্মীদের পুর্নবাসন করার আশ্বাস দিলেও সমাবেশে বক্তরা যৌনপল্লী উচ্ছেদের আল্টিমেটাম দেয় সরকারকে। কিছু দিনের মধ্যে যৌনকর্মীদের উচ্ছেদ করা না হলে মাদারীপুরকে অচল করার হুমকিও দেয় কিছু কিছু বক্তা। এই ঘোষনায় পুরান বাজার যৌনপল্লীর ৫ শতাধিক যৌনকর্মী উচ্ছেদ ও হামলার আতঙ্কে রয়েছে। নিরাপত্তা চেয়ে তারা প্রশাসনের কাছে লিখিত আবেদন করেছে। রবিবার সকাল থেকে এই যৌনপল্লীর পুরো এরাকায় প্রায় ২ শতাধিক পুলিশ মোতায়ন করা রয়েছে। তবে এই সমাবেশে কোন হামলার ঘটনা ঘটেনি। এদিকে ইসলাহে কওম পরিষদের বক্তদের বক্তকে মানবাধিকার লঙ্ঘন করা হয়েছে বলে অনেকেই মন্তব্য করেন।
গণ সমাবেশে প্রধান অতিথি ছিলেন চরমোনাই পীর মাওলানা মুফতী সৈয়দ মুহাম্মদ রেজাউল করীম, গওহরডাঙ্গার পীর হাফেজ মাওলানা ওমর আহমাদ ও বাহাদুরপুরের পীর মাওলানা আবদুল্লাহ মুহাম্মদ হাসান। এছাড়া বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন পৌর মেয়র খালিদ হোসেন ইয়াদ, বিএনপির সাধারণ সম্পাদক জাহান্দার আলী জাহান, জেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার শাহজাহান হাওলাদার, মুক্তিযোদ্ধা ও পৌরসভার সাবেক চেয়ারম্যান খলিলুর রহমান খান, সৈয়দ সাখাওয়াত হোসেন সেলিম, মাওলানা জাহিদুল আলম, মুফতি মোহাম্মদ ওবায়দুল্লাহ, গোলাম আযম ইরাদ প্রমুখ। সমাবেশে সভাপতিত্ব করেন ইসলাহে কওম পরিষদের সভাপতি ও শাহমাদার দরগাহ শরীফের পীর আলহাজ্ব মাওলানা শরীফ মুজিবুল হক।
সমাবেশে জেলা ইসলাহে কওম পরিষদের পক্ষ থেকে মাসব্যাপী কর্মসূচি ঘোষণা করেন কমিটির সহ-সভাপতি চন্ডবর্দীর পীর আলী আহমদ চৌধুরী। কর্মসূচির অংশ হিসেবে থাকবে আগামী ১২ জুলাই পতিতাদের বৈধ কর্মসংস্থান না করা হলে বিক্ষোভ মিছিল ও জেলা প্রশাসকের বরাবর স্মারকলিপি প্রদান, ১৫ জুলাই জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের সামনে মানববন্ধন কর্মসূচি, ১৭ জুলাই আলোচনা সভা ও গণর্যালী ও ১৯ জুলাই রমজানের পবিত্রতা রক্ষার্থে বিক্ষোভ মিছিল করবে। এছাড়া পতিতাবৃত্তি বন্ধ করা না হলে হরতাল ধর্মঘট এমনকি অনশনের কর্মসূচি দেওয়া হবে।
এদিকে যৌনপল্লীতে হামলা-অগ্নিসংযোগ ও লুটতরাজ ঘটতে পারে এই আতঙ্কে যৌনকর্মীদের জীবন ও মানবাধিকার রক্ষার দাবীতে নৌ-মন্ত্রী, মাদারীপুর জেলা প্রশাসক, পুলিশ সুপার ও গণমাধ্যমসহ মানবাধিকার রক্ষাকারী সংগঠনের কাছে লিখিত আবেদন জানিয়েছেন যৌনকর্মীরা। যৌনপল্লীর বাড়ির মালিক মমতাজ, পূর্ণিমা, লিজা, অনিছা, রিনাসহ অন্যান্য বাড়ির মালিক ও যৌনকর্মীদের স্বাক্ষরিত রয়েছে এই আবেদনপত্রে।
যৌনকর্মীদের সংগঠন বান্ধবী নারী সংঘ-এর সভাপতি মমতা রাণী কর্মকার সাংবাদিকদের বলেন, শহরের পুরানবাজার যে এলাকায় যৌনপল্লী আছে, তার অধিকাংশ জায়গার মালিক যৌনকর্মীরা। শহরের মাঝখানে কোটি কোটি টাকা মূল্যের এই সম্পত্তি। একটি স্বার্থান্বেষীমহল যৌনকর্মীদের মালিকানাধীন জমি দখল করার জন্যই এই পায়তারা চালাচ্ছে। এছাড়া আমাদের অন্যত্র পুর্নবাসন করার ব্যবস্থা করা হউক।
মাদারীপুর পুলিশ সুপার মোহাম্মদ নজরুল হোসেন বলেন, যৌনপল্লীতে হামলার আতঙ্কে যৌনকর্মীরা নিরাপত্তা চেয়ে লিখিত আবেদন করেছিল। গণসমাবেশে নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা হয়।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন