রবিবার, ৬ মে, ২০১২

ওসি শাহীন মন্ডল প্রতিশোধ নিলেন এভাবে . . .

গৌরনদী থেকে মসজিদের ইমামকে খালি হাতে আটক করলেও বোমাসহ আদালতে পাঠাল কালকিনি থানা পুলিশ!

কালকিনি অফিস :গত ২৯ এপ্রিল বরিশালের গৌরনদী উপজেলার পৌর এলাকার টরকীরচর বায়তুল আমান জামে মসজিদের ইমামকে অনিয়মতান্ত্রিকভাবে মসজিদের ভিতরে মুসুল্লিদের সামনে থেকে আটক করে কালকিনি থানা পুলিশ। আটকের পরেরদিন সকালে স্থানীয় ও জেলার সংবাদকর্মীদের কাছে ৮টি হাতবোমাসহ কাওছার কবিরাজকে আটক করা হয়েছে বলে তথ্য সরবরাহ করেন থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) শাহীন মন্ডল। পরে পুলিশ বাদী হয়ে জঙ্গী ও সন্ত্রাসী কর্মকান্ডের সাথে জড়িত অভিযোগে মামলা দিয়ে কাওছার কবিরাজকে আদালতের মাধ্যমে জেল-হাজতে পাঠিয়েছে। স্থানীয় সাংবাদিকরা ছবি তুলতে গেলে কাওছার কবিরাজ কান্না জড়িত কণ্ঠে বলেন, ‘চোখ বেঁধে দুই পাঁ ও হাত ধরে বুকের উপর উঠে ৪ জন পুলিশ আমাকে পিটিয়ে বোমের বিষয়ে স্বীকারোক্তী নিতে চায়। নির্যাতন সহ্য করতে না পেরে তাদের কাগজে স্বাক্ষর করেছি।’

আটককৃত কাওছার কবিরাজ চরদৌলত খাঁ ইউনিয়ন পরিষদের নির্বাচনে চেয়ারম্যান প্রার্থী হলে প্রতিপক্ষের সাথে সংঘর্ষের সময় পুলিশ তাকে আটক করলে গ্রামবাসী শাহীন মন্ডলের হাত থেকে জোর করে ছিনিয়ে নেয়। সেই জের ধরে শাহীন মন্ডল ক্ষীপ্ত হয়ে প্রতিশোধ নিতে এই ঘটনা ঘটিয়েছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। এর আগেও ওসি শাহীন মন্ডল পৌর এলাকার লামচরি গ্রামের আ: সামাদ হাওলাদারের ছেলে ঠিকাদার সাইফুর রহমান রণিকে সৈয়দ আবুল হোসেন বিশ্ববিদ্যালয় কলেজের সামনে থেকে অর্ধশতাধিক মানুষের মধ্য থেকে খালি হাতে আটক করলেও  ৫ বোতল ফেন্সিডিলসহ আদালতের মাধ্যমে জেল-হাজতে পাঠায়।

কাওছার কবিরাজের স্ত্রী হাফজা খাতুন বলেন, ‘আমার স্বামীকে টরকী থেকে আটক করলে গ্রামবাসী সারারাত বাড়িতে ছিল, কোন সময়েই বাড়িতে পুলিশ আসেনি। ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনের সংঘর্ষের জের ধরে আমার স্বামীকে ওসি শাহীন মন্ডল ধরেছে। হয়রানি করতে বোমার মামলা দিয়েছে।’ কাওছার কবিরাজ আওয়ামীলীগের একজন কর্মী বলে জানিয়েছেন স্থানীয় আওয়ামীলীগের সভাপতি ফজলুর রহমান মাষ্টার।

মামলা সূত্রে জানা গেছে, উপজেলার চরদৌলত খাঁ ইউনিয়নে নতুন চরদৌলত খাঁ গ্রামের নিজ বাড়ি থেকে কাওছার কবিরাজকে ৮টি হাতবোমাসহ আটক করা হয়েছে- মামলায় উল্লেখ করেছেন এসআই ফায়েকুজ্জামান। অথচ ঐ রাতে তিনি বাড়িতেই ছিলেন না। কাওছার কবিরাজকে মসজিদের ভিতর থেকে আটকের বিষয়টি মসজিদ কমিটি লিখিতভাবে কালকিনি প্রেসক্লাবের সাংবাদিকদের জানিয়েছেন। মসজিদ কমিটির সাধারণ সম্পাদক নান্নু খাঁন জানান, ‘মাগরিবের নামাজ শেষে এক আমেরিকা প্রবাসীর সুস্থ্যতা কামনায় দোয়া মোনাজাত অনুষ্ঠিত হয়। মোনাজাতে সাদা পোষাকে পুলিশের ৪/৫ জন সদস্য অংশ নেয় এবং মিষ্টি খায়। পরে হুজুরকে মসজিদের বাহিরে ডেকে নিয়ে মটরসাইকেলে উঠিয়ে নিয়ে যায়। এ ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী রয়েছেন প্রায় অর্ধশতাধিক মুসুল্লী।’ মসজিদ কমিটির সদস্য স্বপন মোল্লা, হায়দার আলী ও মোশারেফ হোসেন বলেন, ‘কালকিনি থানার দারোগা পরিচয় দিয়ে হুজুরকে নিয়ে গেলে আমরা বাঁধা দেইনি।’ মসজিদ কমিটির সভাপতি মোসলেম হাওলাদার বলেন, ‘কাওছার কবিরাজ গত ৭মাস যাবৎ এই মসজিদে ইমামতি করছেন। তিনি এখানে আসার পর তার আল্লাওলা আচরণে মসজিদে মুসুল্লীর সংখ্যা বেড়ে গেছে কয়েকগুণ। সে না থাকায় আমরা মুসুল্লীরা ইয়াতিম হয়ে গেছি।’

টরকীবন্দর পুলিশ ফাঁড়ির ইানচার্জ সিদ্দিকুর রহমান (এবি) বলেন, ‘এক থানার পুলিশ অন্য থানার কোন আসামী বা সন্দেহমূলকভাবে কাউকে আটক করা সম্পূর্ণ বেআইনী। কাওছার কবিরাজকে আটকের ব্যাপারে কালকিনি থানা পুলিশ আমাদের অবহিত করেনি।’

ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনের আক্রোশ ও উদ্ধারকৃত বোমার বিষয়ে জানতে চাইলে কালকিনি থানার অফিসার ইনচার্জ একেএম শাহীন মন্ডল বিষয়টি এড়িয়ে গিয়ে বলেন, ‘কাওছার কবিরাজকে তার বাড়িতে অবস্থানকালেই আটক করা হয়েছে।’

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন