রবিবার, ৬ মে, ২০১২

ভিক্ষাবৃত্তি উন্নয়নের অন্তরায়


জাহিদ হাসান :বাংলাদেশ একটি জনবহুল দেশ। অধিকাংশ লোক দারিদ্রসীমার নিচে বসবাস করছে। জনসংখ্যা অনুযায়ী দিন দিন বেকারত্বের সংখ্যা বেড়ে চলছে জ্যামিতিক হারে, যা জাতীয় উন্নয়নের পথে বড় ধরণের বাঁধা হয়ে দাঁড়িয়েছে। তাই মানুষ জীবন-জীবিকা নির্বাহের জন্য নানা ধরণের পথ বেছে নিতে বাধ্য হচ্ছে। ফলে অনেক নীতি গর্হিত কর্মকান্ড, ধনী শ্রেণির নিপীড়ন যেমন রয়েছে তেমন রয়েছে দরিদ্র মানুষের নিত্য দিনের আহাজারি। হতদরিদ্র নিঃস্ব মানুষগুলো বাধ্য হয়ে ভিক্ষাবৃত্তিকে বেছে নিচ্ছে। অন্যদিকে সুস্থ সবল মানুষ ছদ্মবেশে ভিক্ষা করে বড় অংকের টাকা সঞ্চয় করে রাতারাতির বাড়ি গাড়ীর মালিক হয়ে যাচ্ছেন।

অবিশ্বাস্য হলেও সত্য ঢাকার শহরে ভিক্ষা করে বাড়ি করেছেন এমন ঘটনা বাস্তবে রয়েছে। প্রথমে শখের বশে বা সুকৌশলে জীবিকার জন্য ভিক্ষাবৃত্তি শুরু করলেও পরে ভালো আয় হওয়াতে পেশা হিসেবে বেছে নেয়। বাংলাদেশে মোট জনসখ্যা ১৬ কোটি তাই যারা ভিক্ষা করেন তারা হিসেব করে ১ লক্ষ লোক ১ টাকা করে দিলে কত দিন লাগে টাকার মালিক হতে। অন্ধ, খোড়া, বিকলাঙ্গ, প্রতিবন্ধী অল্প বয়সী বা বয়স্ক মানুষদের অপহরণ করে বা অল্প অর্থে ক্রয় করে দালালরা বিভিন্ন জায়গায় বসিয়ে দেয়। দালালদের কথা মতে রাস্তার মোড়ে মোড়ে, মসজিদের সামনে, লোকালয়, স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয় প্রভৃতি স্থানে জীর্ণ, শীর্ণ সাজসজ্জা এবং ভিক্ষা চাওয়ার বাচন ভঙ্গি শিখিয়ে দেওয়া হয়। এ ক্ষেত্রে দালাল বা ভিক্ষাবৃত্তির মস্তান চক্র খুবই অমানবিক আচরণ করে থাকে।

বাংলাদেশে এমনও ভিক্ষুক নেতা বা সর্দার আছেন তার অধীনে ১০/২০ জন ভিক্ষুক একটি নির্দিষ্ট এলাকায় ভিক্ষা করেন। সারাদিন ভিক্ষা করে অর্জিত টাকার সিংহ ভাগ নিয়ে যায় নেতারা আর যথা সামান্য পায় ভিক্ষুকরা। এতে করে খুব সহজে মোটা অংকের টাকা উর্পাজন করছে বিনা পরিশ্রমে। আমাদের দেশের রন্দ্রে রন্দ্রে দূর্নীতি গ্রাস করার ফলে এবং সর্বত্র স্বজনপ্রীতির কারণে ধনীরা আরো ধনী আর গরীব মানুষেরা দিন দিন দারিদ্র থেকে দারিদ্র সীমার নিচে চলে যাচ্ছে। যার ফলে অসহায় মানুষ নিরুপায় হয়ে ভিক্ষাবৃত্তির মতো আপত্তিকর পেশা বেছে নিচ্ছে। অভাবের কারণে, মসজিদ বা মাদ্রাসা নির্মাণের কথা বলে, শখের বশে বা ছদ্মবেশে ভিক্ষা করা বা দল নেতা হওয়া সবই ভিক্ষাবৃত্তির মধ্যে পড়ে। মানুষের দুর্বলতা কাজে লাগিয়ে ধর্মকে ব্যবহার করে বিভিন্ন সময়ে মসজিদের পাশে (জুমার দিনে), ঈদের জামাতের পাশে, মাজার সংলগ্ন এলাকায়, হাসপাতাল, ক্লিনিক, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের আশেপাশে ভিক্ষা করার প্রবণতা বেশী দেখা যায়। বাংলাদেশে যতগুলো সামাজিক সমস্যা বিদ্যমান তার মধ্যে ভিক্ষাবৃত্তি অন্যতম। সরকার বা রাষ্ট্র পরিচালনার দায়িত্বে যারা রয়েছেন তারা যদি এখনই যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ না করেন তাহলে সময়ের পালাক্রমে এ সমস্যা সমাজে প্রকট আকার ধারণ করবে যা সভ্য জাতি হিসেবে গড়ে ওঠার ক্ষেত্রে বড় ধরণের প্রতিবন্ধকতা তৈরী করবে। একটি উন্নত জাতি হিসেবে গড়ে উঠতে হলে সবাইকে কর্মঠ হতে হবে। আমরা অহরহ ধর্মের দোহাই দিয়ে থাকি কিন্তু আমাদের ইসলাম ধর্ম কত কঠোরভাবে ভিক্ষাবৃত্তি নিষেধ করেছেন তা মেনে চলি না। ১৬০১ সালে ইংল্যান্ডে ভিক্ষাবৃত্তি চরম আকার ধারণ করেছিল তখন রানী এলিজাবেধ শক্ত হাতে সেদিন ভিক্ষাবৃত্তি নির্মুল করার কারণে আজকে যুক্তরাজ্য উন্নত জাতি হিসেবে বিশ্বের বুকে মাথা তুলে দাঁড়াতে পেরেছে। ভিক্ষাবৃত্তি যে কোন জাতির কাছে একটি লজ্জাজনক বিষয়। আমাদের দেশে ভিক্ষাবৃত্তি একটি সামাজিক ব্যাধি হিসেবে রুপ লাভ করেছে। তাই যত দ্রুত সম্ভব এ অবস্থার উন্নয়ন করা দরকার। আধুনিক বিশ্বের সাথে তাল মিলিয়ে চলতে হলে এই বিশ্বায়নের যুগে কোনো ভাবেই ভিক্ষাবৃত্তি কাম্য নয়। ভিক্ষাবৃত্তির ফলে জাতি দিন দিন অলস হয়ে যাচ্ছে যার ফলে আমাদের জনশক্তি কাজে লাগছে না। জাতি হিসেবে আমরা বিশ্বের বুকে অনেক পিছনে পড়ে আছি। সুতরাং ভিক্ষাবৃত্তি জাতির জন্য অভিশাপ বয়ে আনছে।  তাই এখনই সমাজ থেকেই ভিক্ষাবৃত্তির মূলৎপাটন করতে হবে।

লেখক- নির্বাহী সম্পাদক, সাপ্তাহিক কালকিনি

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন