খায়রুল আলম/সালাহ উদ্দিন মাহমুদ : পোলাপানের অসুখ-বিসুখ অইলে এইহানে আহি। কিন্তু পোলাপান পুলিশ দেইখ্যা ডরে চিক্কর (চিৎকার) দেয়। আর গর্ভবতী মায়েরা আহেনা লজ্জায়। ১৫ বছর ধইরা এই অবস্থা।’ মাদারীপুরের কালকিনি উপজেলার বাঁশগাড়ী ইউনিয়ন পরিবার পরিকল্পনা ও স্বাস্থ্য উপকেন্দ্রে এসে ক্ষোভের সাথে কথাগুলো বললেন উড়ার চর গ্রামের জাকির আকনের স্ত্রী নারগিস বেগম।
সরেজমিনে জানা যায়, উপজেলার বাঁশগাড়ী ইউনিয়ন পরিবার পরিকল্পনা ও স্বাস্থ্য উপকেন্দ্রটি ১৫ বছর যাবৎ খাসের হাট পুলিশ তদন্তকেন্দ্রের পুলিশের দখলে। ফলে মারাত্মকভাবে বাধাগ্রস্ত হচ্ছে স্বাস্থ্যসেবা ও পরিবার পরিকল্পনার স্বাভাবিক কার্যক্রম। এ নিয়ে ২০০৬ সাল থেকে বিভিন্ন পত্রিকায় একাধিক প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। তখন উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ পুলিশ সরিয়ে নেওয়ার কথা বললেও এখন পর্যন্ত তা বাস্তবায়ন হয়নি। যে কারণে সাধারণ মানুষের মধ্যে চাঁপা ক্ষোভ বিরাজ করছে।
বাঁশগাড়ী ইউনিয়ন পরিবার-পরিকল্পনা ও স্বাস্থ্য উপকেন্দ্র সুত্রে জানা যায়, আজ থেকে ১৫ বছর আগে পুলিশ তদন্তকেন্দ্রের নির্ধারিত স্থানে ভবন না থাকায় কালকিনির পুলিশ সাময়িকভাবে বাঁশগাড়ী ইউনিয়ন পরিবার-পরিকল্পনা ও স্বাস্থ্য উপকেন্দ্রে খাসের হাট পুলিশ তদন্ত কেন্দ্র স্থাপন করে। তখন থেকে ১৫ বছর যাবৎ একজন উপপরিদর্শককে(এসআই) তদন্ত কেন্দ্রের ইনচার্জ করে ২০ জন পুলিশ নিয়ে স্বাস্থ্য উপকেন্দ্রটি দখল করে আছে। যে কারণে সাধারণ মানুষ বিশেষ করে গর্ভবতী মায়েরা লজ্জায় সেখানে গিয়ে সেবা নিতে পারছেনা। আর শিশুরা পুলিশ দেখলে ভয়ে চিৎকার করে । ফলে অভিভাবকরা পড়েন বিব্রতকর অবস্থায়। অবশেষে চিকিৎসা না নিয়েই বাড়ি ফিরে যেতে বাধ্য হন।
স্বাস্থ্য কেন্দ্রের দায়িত্বরত এফডব্লিউভি রেখা আক্তার জানান,‘ আমি এখানে এসেই এ অব্যবস্থাপনা দেখছি। আমার পরিবার নিয়ে এখানে থাকার কোন উপায় নেই। তাছাড়া এফসিআই ও এফডব্লিউভি’র দু’টি পরিবার কোন মতেই থাকা সম্ভব নয়। পুলিশ পুরো দোতলা দখল করে রেখেছে। এদিকে নিচতলায় পার্টিশন দিয়ে অফিস কাম আসবাবপত্র রাখার ব্যবস্থা করতে হয়েছে। মূলত সম্পূর্ণ অনিয়মতান্ত্রিকভাবে এটা করা হয়েছে।’
বিভিন্ন গ্রাম থেকে চিকিৎসা নিতে আসা আয়শা বেগম, আ: খালেক, জালাল হাওলাদার ও নিশিসহ কয়েকজন জানান,‘ এইডা কি থানা না হাসপাতাল তা বোঝা মুশকিল। পুলিশ এইহান থিক্যা যাইবো কবে? ১৫ বছর অইয়া গেল এহনো পুলিশ যায় না। পুলিশ না যাইতে আমরা আর এইহানে আইমু না।’
এ ব্যাপারে বাঁশগাড়ী ইউনিয়নের নবনির্বাচিত চেয়ারম্যান জাকির হোসেন ঢালী জানান,‘ আমি এ সমস্যা সম্পর্কে আগেই অবগত ছিলাম। আমি খুব শীঘ্রই যথাযথ কর্তৃপক্ষের সাথে যোগাযোগ করবো। যাতে পুলিশ তাদের নির্ধারিত স্থানে ফিরে যায়।’
পুলিশ তদন্ত কেন্দ্রের ইনচার্জ নাসির উদ্দিন জানান,‘ এখানে অবস্থান করে আমরাও নিরাপত্তাহীনতায় ভূগতেছি। এ ব্যাপারে উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে আবেদন করেছি।’
কালকিনি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা এ কে এম শাহীন মন্ডল জানান,‘ এব্যাপারে আমরা একাধিকবার লিখিতভাবে আবেদন করেছি। পুলিশের জন্য নির্ধারিত স্থানে ভবন করতে পারলেই সমস্যার সমাধান হবে।’
উপজেলা পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা: সৈয়দ লিয়াকত আলী জানান,‘ শুরু থেকেই আমরা উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সাথে যোগাযোগ করে যাচ্ছি। কিন্তু কোন কাজ হচ্ছেনা। কারণ সরকারি জায়গায় সরকারি লোক থাকে। পার্থক্য এই ডাক্তারের জায়গায় পুলিশ থাকে।’
স্বাস্থ্য উপকেন্দ্রে পুলিশ থাকার কথা স্বীকার করে মাদারীপুরের পুলিশ সুপার মো: নজরুল হোসেন জানান,‘ এতে স্বাস্থ্যসেবা বিঘিœত হচ্ছে সত্যি। কিন্তু জনগণের নিরাপত্তা ও স্বাস্থ্যসেবা দু’টিই দরকার। তবে পুলিশের নির্ধারিত স্থানে ভবন না থাকায় স্বাস্থ্যকেন্দ্রে থাকতে হচ্ছে। আমরা যতদ্রুত সম্ভব সরিয়ে নেওয়ার ব্যাপারে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণের চেষ্টা করবো।’
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন