শনিবার, ১২ মে, ২০১২

মন্ত্রীর কাছে ওসি শাহিন মন্ডলের বিরুদ্ধে অভিযোগ

অফিস ডেস্ক :
কালকিনি থানায় বিনা কারণে দুইজনকে আটকের পর ওসিসহ ৩/৪জন এসআই মিলে পর্যায়ক্রমে নির্যাতনের ঘটনা তদন্তের নামে লোজ দেখানো তদন্ত কমিটি গঠন করে পুরো ঘটনা ধামাচাপা দেয়া হয়েছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। শনিবার সকালে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি মন্ত্রী সৈয়দ আবুল হোসেনের কাছে নির্যাতিতরা ওসি শাহিন মন্ডলের বিরুদ্ধে অভিযোগ দিয়েছেন। এদিকে নির্যাতিতরা ওসির বিরুদ্ধে সংবাদকর্মীদের কাছে তথ্য দেয়ায় তারা নিরাপত্তাহীনতায় রয়েছেন বলে স্থানীয় সাংবাদিকদের জানিয়েছেন।
ভূক্তভোগী সুত্রে জানা যায়, গত সোমবার রাত ৮ টায় কালকিনি মাছ বাজারের কাছ থেকে পৌরসভার ২নং ওয়ার্ডের সাবেক কমিশনার খলিল হাওলাদার ও চর ঠেঙ্গামারা গ্রামের আঃ গণি বেপারির ছেলে আবুল কাশেমকে কোন মামলা ছাড়াই আটক করা হয়। আটকের পর থানায় এনে ওসি শাহীন মন্ডল, এসআই নুর হোসেন, ফায়েকুজ্জামান ও আশফাকুল ইসলাম মিলে অমানবিক নির্যাতন চালায়। এ সময় অজ্ঞান হয়ে পড়লে রাত ১১ টা ৩৫ মিনিটে আবুল কাশেমকে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে পুনরায় থানায় নিয়ে যাওয়া হয়। কাশেমের অবস্থা আশঙ্গাজনক হওয়ায় হাসপাতালের কর্তব্যরত ডাক্তার অপূর্ব মল্লিক রোগিকে ভর্তি করতে বললেও পুলিশ ভর্তি করেনি। কিন্তু থানায় কোন মামলা না থাকায় পুলিশ মঙ্গলবার সকালে আবুল কাশেমকে ছেড়ে দেয়। পরে কাশেমের স্বজনরা তাকে থানা থেকে নিয়ে দুপুর সোয়া ১২ টায় আশঙ্কাজনক অবস্থায় উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করে।
কালকিনি থানা পুলিশের অমানবিক নির্যাতনের ঘটনার বিষয়ে জেলা পুলিশ সুপার নজরুল হোসেনের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি এ প্রতিবেদকের কাছে তার বক্তব্য ছিল এরকম-  ‘খলিল হাওলাদার ও কাশেম বেপারী নামের দুজনকে মামলা না থাকলেও থানায় আটকে ওসিসহ ৩/৪ জন এসআই মিলে অমানবিক নির্যাতনের বিষয়টি সংবাদকর্মীদের কাছে শুনেই মঙ্গলবার রাতে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার খন্দকার ফরিদুল ইসলামকে প্রধান করে দুই সদস্য বিশিষ্ট তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। এই কমিটিকে ৩ দিনের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশ দেয়া হয়েছে। তদন্ত প্রতিবেদন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেয়া হবে।’
খন্দকার ফরিদুল ইসলাম তদন্ত কমিটির দায়িত্ব পেয়েই রাতে তদন্তের জন্য কালকিনি থানায় পরিদর্শনে আসেন। ওসি’র কক্ষে ওসিসহ এসআই ও এএসআইদের নিয়ে ঘন্টাব্যাপী রুদ্ধধার বৈঠক করেন। তদন্ত প্রতিবেদন দেয়ার সময় শেষ হয়েছে বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায়।
এ ব্যাপারে খন্দকার ফরিদুল ইসলাম এ প্রতিবেদককে জানান, ডিআইজি অফিস থেকে আমার অফিসে অডিট হওয়ায় তদন্ত করতে পারি নাই। আগামী সোমবার পর্যন্ত তদন্তের সময় বাড়ানো হয়েছে। হাসপাতালে গিয়ে ডাক্তারের সাথে কথা বলেছি, সেসময় ভিকটিমকে পাইনি।
তিনি আরো বলেন, শুক্রবার রাতে মন্ত্রী স্যারের সাথে এ ব্যাপারে আমার কথা হয়েছে। বিভিন্নভাবে তদন্ত কার্যক্রম চলছে। তদন্তে পুলিশ দোষী প্রমাণীত হলে অবশ্যই ব্যবস্থা নেয়া হবে।
এদিকে নির্যাতনের ঘটনাটি বিভিন্ন পত্রপত্রিকায় ও টিভিতে দেখায় ওসি ফের গ্রেপ্তারের জন্য নির্যাতিত পরিবারকে হুমকী দেন। গ্রেপ্তারের ভয়ে পািলয়ে বেড়াচ্ছেন এই নির্যাতিত দুই পরিবারের লোকজন।
বিশ্বস্থ সূত্রে নিশ্চিত হওয়া গেছে, পালিয়ে থাকার পর শনিবার সকাল ১১টায় কাশেম বেপারী স্থানীয় সাংসদ, তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি মন্ত্রী সৈয়দ আবুল হোসেনের সাথে উপজেলার ডাসার এলাকার েেশখ হাসিনা একাডেমী অ্যান্ড কলেজের হলরুমে দেখা করেন। মন্ত্রীর কাছে কাশেম বেপারী তার উপর পুলিশের নির্যাতনের চিহ্ন দেখান। মন্ত্রী কাশেমের কাছ থেকে পুলিশে অমানবিক নির্যাতনের ঘটনার বর্ণনা শুনে বলেন, ‘ওসি’র আক্রোশ বসত: নির্যাতনের ঘটনা পুরো সত্য, বিষয়টি আমাকে অনেকেই জানিয়েছেন।’ এ সময় উপস্থিত ছিলেন স্থানীয় আওয়ামীলীগ ও তার অঙ্গসংগঠনের নেতা-কর্মী, নির্যাতিত পরিবারের লোকজনসহ শ’শ’ এলাকাবাসী।
নির্যাতিত কাশেম বেপারী এ প্রতিবেদককে জানান, ‘গ্রেপ্তারের ভয়ে বাড়িতে থাকতে পারছি না। মন্ত্রীর সাথে দেখা করে ওসি’র নির্যাতনের নির্মম কাহিনীর বর্ণনা করলে অনেকেই চোখের পানি ধরে রাখতে পারেননি। ঘটনা যে সত্য তা মন্ত্রীও স্বীকার করেছেন। আমরা ওসি’র অপসারণ চাইলে তিনি নিরব থাকেন, কোন কিছু বলে আমাদের আশ্বাস দেননি।’ তদন্ত কমিটির ব্যাপারে তিনি বলেন, ‘তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছ বলে শুনেছিলাম কিন্তু দেখিনি। তদন্তের জন্য কেউ আমার সাথে সরাসরি বা মোবাইল ফোনেও যোগাযোগ করেনি।’
এসআই ফায়েকুজ্জামান জানান, ‘তদন্ত কমিটি গঠনের ব্যাপারে আমার কোন কিছু জানা নেই। সাংবাদিকরা ছাড়া কেউ আমার সাথে এ বিষয়ে কোন কথা বলেনি।’


কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন